39.3101.86
উইকিভ্রমণ থেকে

এশিয়া পৃথিবীর সবচেয়ে বহৎ ও সবচেয়ে জনবহুল মহাদেশ, প্রাথমিকভাবে এই মহাদেশ পূর্ব ও উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত। এটি ভূপৃষ্ঠের ৮.৭ শতাংশ ও স্থলভাগের ৩০ শতাংশ জুড়ে অবস্থিত। আনুমানিক ৪৩০ কোটি মানুষ বসবাস করেন যার পরিমাণ বিশ্বের ৬০ শতাংশেরও বেশি মানুষ। অধিকাংশ বিশ্বের মতো, আধুনিক যুগে এশিয়াতেও জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার উচ্চ। উদাহরণস্বরূপ, বিংশ শতাব্দীর সময়, এশিয়ার জনসংখ্যা প্রায় চারগুণ বেড়ে গেছে।

ভারতের আগ্রায় তাজমহল

এশিয়ার সীমানা সাংস্কৃতিকভাবে নির্ধারিত হয়, যেহেতু ইউরোপের সাথে এর কোনো স্পষ্ট ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতা নেই, যা এক অবিচ্ছিন্ন ভূখণ্ডের গঠন যাকে একসঙ্গে ইউরেশিয়া বলা হয়। এশিয়ার সবচেয়ে সাধারণভাবে স্বীকৃত সীমানা হল সুয়েজ খাল, ইউরাল নদী, এবং ইউরাল পর্বতমালার পূর্বে, এবং ককেশাস পর্বতমালা এবং কাস্পিয়ানকৃষ্ণ সাগরের দক্ষিণে। এটা পূর্ব দিকে প্রশান্ত মহাসাগর, দক্ষিণে ভারত মহাসাগর এবং উত্তরে উত্তর মহাসাগর দ্বারা বেষ্টিত। ইউরাল পর্বতমালা, ইউরাল নদী, কাস্পিয়ান সাগর, কৃষ্ণসাগর এবং ভূমধ্যসাগর দ্বারা এশিয়া ও ইউরোপ মহাদেশ দুটি পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন। এছাড়া লোহিত সাগর ও সুয়েজ খাল এশিয়া মহাদেশকে আফ্রিকা থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে এবং উত্তর-পূর্বে অবস্থিত সংকীর্ণ বেরিং প্রণালী একে উত্তর আমেরিকা মহাদেশ থেকে পৃথক করেছে। উল্লেখ্য, বেরিং প্রণালীর একদিকে অবস্থান করছে এশিয়া মহাদেশের অন্তর্গত রাশিয়ার উলেনা এবং অপর পাশে উত্তর আমেরিকা মহাদেশের অন্তর্গত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা। এই প্রণালীটির সংকীর্ণতম অংশটি মাত্র ৮২ কি.মি. চওড়া, অর্থাৎ বেরিং প্রণালীর এই অংশ থেকে উত্তর আমেরিকা মহাদেশের দূরত্ব মাত্র ৮২ কি.মি.।

অঞ্চল[সম্পাদনা]

[[File:
রাশিয়াইউরোপপূর্ব এশিয়াওশেনিয়াপাপুয়ানিউগিনিঅস্ট্রেলিয়াদক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াআফ্রিকামধ্যপ্রাচ্যদক্ষিণ এশিয়ামধ্য এশিয়াককেশাস
ভ্রমণের জন্য একটি অঞ্চলে ক্লিক করুন!
|thumb|350px|right|এশিয়ার অঞ্চল, রং করা মানচিত্র]]
  মধ্য এশিয়া (কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান)
  পূর্ব এশিয়া (চীন, হংকং, জাপান, ম্যাকাও, মঙ্গোলিয়া, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান)
  মধ্যপ্রাচ্য (বাহরাইন, ইরান, ইরাক, ইসরায়েল, জর্ডান, কুয়েত, লেবানন, ওমান, ফিলিস্তিন, কাতার, সৌদি আরব, সিরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইয়েমেন)
  রাশিয়া এবং ককেশাস (আবখাজিয়া, আজারবাইজান, আর্মেনিয়া, জর্জিয়া, সাইবেরিয়া, নাগোর্নো-কারাবাখ, দক্ষিণ ওসেটিয়া)
  দক্ষিণ এশিয়া (আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভূটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা)
  দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া (ব্রুনাই, কম্বোডিয়া, পূর্ব তিমুর, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম)

শহর[সম্পাদনা]

তিয়ানমেন স্কয়ার বেইজিং, চীন
  • 1 ব্যাংকক—মন্দির এবং সৌন্দর্যের জন্য থাইল্যান্ডের জমকালো, কসমোপলিটান রাজধানী
  • 2 বেইজিং—গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের রাজধানী তিয়েনআনমেন স্কোয়ার, নিষিদ্ধ শহর এবং অনেক সাংস্কৃতিক দর্শনীয় স্থান
  • 3 দুবাইসংযুক্ত আরব আমিরশাহির সবচেয়ে আধুনিক এবং প্রগতিশীল আমিরশাহি একটি অবিশ্বাস্য গতিতে উন্নয়নশীল
  • 4 হংকং—একটি অনন্য মিশ্র চীনা এবং ব্রিটিশ ঐতিহ্যসহ একটি সত্যিকারের বিশ্বমানের মহানগরী
  • 5 জেরুজালেম—পুরানো শহরের ইউনেস্কো ওয়র্ল্ড হেরিটেজ সাইট ধারণকারী, এই শহরটি ইহুদি, খ্রিস্টান এবং মুসলমানদের কাছে পবিত্র স্থান
  • 6 মুম্বাই— ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের আর্থিক রাজধানী, সবচেয়ে বৈচিত্র্যময়, ব্যস্ত এবং বিশ্বজনীন শহর, তার নাইটলাইফের জন্য পরিচিত এবং বিনোদন শিল্পের আস্তানা হিসাবে সুপরিচিত
  • 7 সিউল— সুন্দর প্রাসাদ, দুর্দান্ত খাবার এবং একটি হপিং নাইটলাইফ, সিওল পুরানো এবং নতুন এশিয়ার অভিজ্ঞতা অর্জনের একটি অব্যর্থ উপায়
  • 8 সিঙ্গাপুর— চীনা, ভারতীয়, মালয় এবং ব্রিটিশ প্রভাব মিশ্রণসহ আধুনিক, সমৃদ্ধ শহর-রাষ্ট্র
  • 9 টোকিও—বিশ্বের বৃহত্তম শহরটি পুরানো জাপানের ঝলকগুলির পাশাপাশি ভবিষ্যতের উচ্চ-প্রযুক্তির দৃষ্টিভঙ্গির সাথে একটি বিশাল, ধনী এবং চিত্তাকর্ষক মহানগর চিত্র নিয়ে হাজির

বৈশিষ্ট্য[সম্পাদনা]

ভূগোল[সম্পাদনা]

এশিয়ার ইতিহাস[সম্পাদনা]

এশিয়ার ইতিহাস বিভিন্ন প্রান্তিক উপকূলীয় অঞ্চলের স্বতন্ত্র ইতিহাস হিসেবে দেখা যায়: পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্য, যা এশিয়ার মধ্য প্রান্তর দ্বারা যুক্ত।

এশিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলগুলো পৃথিবীর প্রাচীনতম পরিচিত সভ্যতাগুলোর বিকাশস্থল, যা উর্বর নদী উপত্যকাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে। সভ্যতাগুলোতে মেসোপটেমিয়া, সিন্ধু উপত্যকা ও হোয়াংহোর অনেক মিল রয়েছে। এই সভ্যতাগুলো প্রযুক্তি এবং ধারণা বিনিময় করতে পারে, যেমন গণিত ও চাকা। অন্যান্য উদ্ভাবন, যেমন লিখন রীতি, প্রতিটি সভ্যতায় পৃথকভাবে বিকশিত হয়েছে বলে মনে হয়। শহর, রাজ্য এবং সাম্রাজ্য এসব নিম্নভূমিতে বিকশিত হয়।

কেন্দ্রীয় প্রান্তীয় অঞ্চলে দীর্ঘকাল ধরে অশ্বারোহী যাযাবর দ্বারা অধ্যুষিত ছিল, যারা কেন্দ্রীয় প্রান্তীয় অঞ্চল থেকে এশিয়ার সব অঞ্চল পৌঁছাতে পারত। কেন্দ্রীয় প্রান্তীয় অঞ্চল থেকে প্রাচীনতম বংশের বিস্তার হল ইন্দো-ইউরোপীয়, যারা তাদের ভাষা মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া, চীনের সীমানা পর্যন্ত ছড়িয়ে দিয়েছিল। এশিয়ার উত্তর দিকের শেষ সীমায় অবস্থিত সাইবেরিয়া প্রান্তীয় যাযাবরদের জন্য দুর্গম ছিল মূলত ঘন বন, জলবায়ু এবং তুন্দ্রার জন্য। এই এলাকা খুব জনবিরল ছিল।

মধ্য এবং প্রান্তীয় অঞ্চল অধিকাংশই পর্বত ও মরুভূমি দ্বারা পৃথক ছিল। ককেশাস, হিমালয় পর্বতমালা ও কারাকোরাম, গোবি মরুভূমি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে, যা প্রান্তীয় অশ্বারোহী কেবল পার হতে পারে। যখন শহুরে বাসিন্দারা আরও উন্নত ছিল প্রযুক্তিগতভাবে ও সামাজিকভাবে, তখন অনেক ক্ষেত্রেই তারা প্রান্তীয় অশ্বারোহীর আক্রমণের বিরুদ্ধে সামরিকভাবে সামান্যই লড়তে পারত। যাইহোক, এসব নিম্নভূমিতে যথেষ্ট উন্মুক্ত তৃণভূমি নেই যা বিশাল অশ্বারোহী বাহিনীর যোগান দিতে পারবে; এছাড়া অন্যান্য কারণে, যাযাবরেরা চীন, ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহ জয় করে তাদের স্থানীয় সমৃদ্ধশালী সমাজে মিশে যেতে পেরেছিল।

সপ্তম শতকে মুসলিম বিজয় চলাকালে, ইসলামিক খিলাফত মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়া জয় করে। পরবর্তিতে ত্রয়োদশ শতকে মোঙ্গল সাম্রাজ্য এশিয়ার অনেক বড়ো অংশ জয় করে, যা চীন থেকে ইউরোপ পর্যন্ত বিস্তৃত। মোঙ্গল আক্রমণ করার আগে, চীনে প্রায় ১২০ মিলিয়ন মানুষ ছিল; আক্রমণের পরবর্তী আদমশুমারিতে ১৩০০ খ্রিস্টাব্দে প্রায় ৬০ মিলিয়ন মানুষ ছিল।

ব্ল্যাক ডেথ, পৃথিবীব্যাপী মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বিধ্বংসী মৃত্যুমিছিল, মধ্য এশিয়ার অনুর্বর সমভূমিতে উদ্ভব হয়ে এটা সিল্ক রোড বরাবর চলে গেছে।

রাশিয়ান সাম্রাজ্য সপ্তদশ শতক থেকে এশিয়া বিস্তৃত হয়, এবং শেষ পর্যন্ত ঊনবিংশ শতকের শেষ নাগাদ সাইবেরিয়া এবং অধিকাংশ মধ্য এশিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। ষোড়শ শতক থেকে উসমানীয় সাম্রাজ্য আনাতোলিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা এবং বলকান অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে। সপ্তদশ শতকে, মাঞ্চুরা চীন জয় করে এবং চিং রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করে। এদিকে ষোড়শ শতক থেকে ইসলামি মুঘল সাম্রাজ্য অধিকাংশ ভারত শাসন করতে থাকে।

ভাষা[সম্পাদনা]

এশিয়া বিভিন্ন ভাষা পরিবার এবং বিচ্ছিন্ন ভাষার আবাস। এশিয়ার বেশির ভাগ দেশে স্থানীয়ভাবে একাধিক ভাষায় কথা বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ এথ্‌নোলগ অনুযায়ী, ৬০০-এর অধিক ভাষা ইন্দোনেশিয়ায়, ও ৮০০-এর অধিক ভাষা ভারতে প্রচলিত। এবং ১০০-এর বেশি ফিলিপাইনে প্রচলিত। চীনের বিভিন্ন প্রদেশে অনেক ভাষা এবং উপভাষা রয়েছে।

যোগাযোগব্যবস্থা[সম্পাদনা]