উইকিভ্রমণ থেকে

রেমা–কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য বাংলাদেশের হবিগঞ্জের অন্যতম প্রধান দর্শনীয় স্থান, যা চুনারুঘাট উপজেলার অন্তর্গত। এটি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার খুব কাছে এবং ভারতের ত্রিপুরা সীমান্ত সংলগ্ন। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ১৩০ কিঃ মিঃ উত্তর-পূর্ব দিকে এটির অবস্থান।

বিশেষত্ব[সম্পাদনা]

এটি একটি শুকনো ও চিরহরিৎ বন এবং সুন্দরবনের পর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক বনভূমি। এছাড়াও এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বণ্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এবং জীব ও উদ্ভিদবৈচিত্র্যে দেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ বনাঞ্চল। ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিথ এই বনটি ১৯৯৬ সালে আরো সম্প্রসারণ করায় বর্তমানে এই অভয়ারণ্যের আয়তন ১৭৯৫.৫৪ হেক্টর। গোটা অঞ্চল রেমা, কালেঙ্গা, ছনবাড়ি ও রশিদপুর- এ চারটি বিটে ভাগ করা। বিস্তীর্ণ এ অঞ্চলটি যেহেতু প্রাকৃতিক বনাঞ্চল, এজন্য বনের দেখভালের জন্য রয়েছে ১১টি ইউনিট ও ৭টি ক্যাম্প।

রেমা–কালেঙ্গা অভয়ারণ্য বিরল প্রজাতির জীববৈচিত্র্যেসমৃদ্ধ। বর্তমানে এই বনে ৩৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৬৭ প্রজাতির পাখি, সাত প্রজাতির উভচর, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ ও ৬৩৮ প্রজাতির গাছপালা-লতাগুল্ম পাওয়া যায়। বিভিন্ন বিরল প্রজাতির পাখির জন্য এই বন সুপরিচিত এবং এদের মধ্যে রয়েছে — ভীমরাজ, টিয়া, হিল ময়না, লাল মাথা কুচকুচি, সিপাহি বুলবুল, বসন্তবৌরি, শকুন, মথুরা, বনমোরগ, পেঁচা, মাছরাঙা, ঈগল, চিল প্রভৃতি। শকুনের নিরাপদ এলাকা-২ তফসিল অনুসারে রেমা–কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য শকুনের জন্য নিরাপদ বলে ঘোষিত।

এই বনে তিন প্রজাতির বানরের বাস, এগুলো হল: উল্টোলেজি বানর, লাল বান্দর (রেসাস) ও নিশাচর লজ্জাবতী বানর। তাছাড়া এখানে পাঁচ প্রজাতির কাঠবিড়ালি দেখা যায়। এর মধ্যে বিরল প্রজাতির মালয়ান বড় কাঠবিড়ালি একমাত্র এ বনেই পাওয়া যায়। বন্যপ্রাণীর মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য আরও রয়েছে মুখপোড়া হনুমান, চশমাপরা হনুমান, উল্লুক, মায়া হরিণ, মেছোবাঘ, দেশি বন শুকর, গন্ধগোকুল, বেজি, সজারু ইত্যাদি। কোবরা, দুধরাজ, দাঁড়াশ, লাউডগা প্রভৃতি সহ এ বনে আঠারো প্রজাতির সাপের দেখা পাওয়া যায়।

বাংলাদেশের যে কয়েকটি প্রাকৃতিক বনভূমি এখনো মোটামু্টি ভাল অবস্থায় টিকে আছে, রেমা-কালেঙ্গা তার মধ্যে অন্যতম। তবে নির্বিচারে গাছ চুরি ও বন ধ্বংসের কারণে এ বনভূমির অস্তিত্বও বর্তমানে হুমকির মুখে।

কীভাবে যাবেন?[সম্পাদনা]

স্থলপথে[সম্পাদনা]

সড়কপথে ঢাকা হতে চুনারুঘাটের দূরত্ব ১৯০ কিলোমিটার এবং জেলা শহর হবিগঞ্জ হতে চুনারুঘাটের দূরত্ব ২৭ কিলোমিটার। রেলপথে ঢাকা হতে শায়েস্তাগঞ্জ রেল স্টেশনের দূরত্ব ২০০ কিলোমিটার; এখানে সরাসরি রেল যোগাযোগ না-থাকায় প্রথমে শায়েস্তাগঞ্জ এসে তারপর বাসে, জীপে বা ম্যাক্সিতে এখানে আসতে হয়।

সড়কপথ[সম্পাদনা]

ঢাকার সায়েদাবাদ বাস স্টেশন থেকে হবিগঞ্জ বা সিলেট বিভাগের যেকোন স্থানের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা দুরপাল্লার বাসে মাধবপুর বা শায়েস্তাগঞ্জ হয়ে চুনারুঘাট আসা যায়; কারণ মাধবপুর ও শায়েস্তাগঞ্জ হচ্ছে সড়কপথে সিলেট বিভাগের প্রধান দুই প্রবেশ-দ্বার এবং এই শহর দুটির উপর দিয়েই মূল ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক বিস্তৃত। ঢাকা-হবিগঞ্জ রুটে চলাচলকারী পরিবহনে মাধবপুর বা শায়েস্তাগঞ্জ আসার ক্ষেত্রে ভাড়া হলো -

  • এসি বাসে - ২৫০ টাকা এবং
  • নন-এসি বাসে - ২০০ টাকা।

আর, ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা পরিবহনে আসার ক্ষেত্রে ভাড়া হলো -

  • এসি বাসে - ১২০০ টাকা এবং
  • নন-এসি বাসে - ৩৭০ টাকা।

মাধবপুর থেকে চুনারুঘাটে আসার সরাসরি বাস, জীপ ও ম্যাক্সি সার্ভিসে ভাড়া হলো -

  • বাসে - ২০ টাকা;
  • জীপে - ৩০ টাকা এবং
  • ম্যাক্সিতে - ৩০ টাকা।

শায়েস্তাগঞ্জ থেকে চুনারুঘাটে আসার সরাসরি বাস, জীপ ও ম্যাক্সি সার্ভিসে ভাড়া হলো -

  • বাসে - ১৫ টাকা;
  • জীপে - ২৫ টাকা এবং
  • ম্যাক্সিতে - ২৫ টাকা।

জেলা শহর হবিগঞ্জ হতে চুনারুঘাটে আসার জন্য সাধারণত সরাসরি বাস, জীপ ও ম্যাক্সি সার্ভিস রয়েছে। এক্ষেত্রে ভাড়া হলো -

  • বাসে - ৩০ টাকা;
  • জীপে - ৪০ টাকা এবং
  • ম্যাক্সিতে - ৪০ টাকা।

রেলপথ[সম্পাদনা]

সংলগ্ন দর্শনীয় এলাকাসমূহ[সম্পাদনা]

  • সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান - চুনারুঘাট;
  • সুরমা চা বাগান - তেলিয়াপাড়া;
  • মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সৌধ - তেলিয়াপাড়া;
  • বাঘাসুরা রাজবাড়ী - বাঘাসুরা;
  • শাহ সোলেমান ফতেহগাজী-এর মাজার - শাহজীবাজার;
  • ফ্রুটস ভ্যালী - শাহজীবাজার;
  • শাহজীবাজার তাপ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র - শাহজীবাজার;
  • শাহজীবাজার রাবার বাগান - শাহজীবাজার।

খাওয়া দাওয়া[সম্পাদনা]

চুনারুঘাটের স্থানীয় পর্যায়ের বিশেষ কোনো বিখ্যাত খাদ্য নেই, কেবল আথনী পোলাও ও সাতকরা (হাতকরা) ব্যতীত। তবে স্থানীয় আনারস, কমলা, পান, লেবু এবং কাঠালের বেশ সুখ্যাতি রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে চা-পাতা। এই এলাকায় প্রচুর মাছ পাওয়া যায় এবং খামার ভিত্তিক হাঁস পালন করা হয়। এখানে সাধারণভাবে দৈনন্দিন খাওয়া-দাওয়ার জন্য স্থানীয় হোটেল ও রেস্টুরেন্টগুলোতে সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়। উন্নতমানের হোটেলের জন্য আসতে হবে মাধবপুরে; এখানে রয়েছেঃ

  1. আল-আমিন হোটেল;
  2. হোটেল নুরজাহান;
  3. হাইওয়ে ইন লিঃ;
  4. পানশী।

থাকা ও রাত্রিযাপনের স্থান[সম্পাদনা]

সাতছড়ি বনে বনবিভাগের একটি বিশ্রামাগার আছে। বনবিভাগের অনুমতি নিতে পারলে সেখানে থাকা সম্ভব। নইলে রাতে থাকতে হবে হবিগঞ্জ, মাধবপুর বা শায়েস্তাগঞ্জ শহরে। থাকার জন্য বেছে নিতে পারেনঃ

  1. সার্কিট হাউজ, হবিগঞ্জ, ☎ ০৮৩১-৫২২২৪।
  2. জেলা পরিষদ রেস্টহাউজ, হবিগঞ্জ।
  3. পানি উন্নয়ন বোর্ড রেস্টহাউজ, হবিগঞ্জ। সিংগেল কক্ষ ভাড়াঃ ১২০/- ও ডাবল কক্ষ ভাড়াঃ ২০০/-।
  4. শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে রেস্টহাউজ - বাংলাদেশ রেলওয়ে'এর ব্যবস্থাধীন (সরকারী)। মোবাইল: ০১৯২০-৪১৬৬২৩।
  5. সড়ক ও জনপথ বিভাগ রেস্টহাউজ - (সরকারী)।
  6. পল্লী বিদ্যুৎ রেস্টহাউজ, শায়েস্তাগঞ্জ - পল্লী বিদ্যুৎ'এর ব্যবস্থাধীন (সরকারী)।
  7. হোটেল সোনার তরী, হবিগঞ্জ। সিংগেল কক্ষ ভাড়াঃ ৩০০/- ও ডাবল কক্ষ ভাড়াঃ ৩৫০/- এবং এসি কক্ষ ভাড়াঃ ৭০০/-।
  8. আল-আমিন হোটেল, মাধবপুর।
  9. হোটেল নুরজাহান, মাধবপুর।
  10. হাইওয়ে ইন লিঃ, মাধবপুর।